Wellcome to National Portal
কৃষি তথ্য সার্ভিস (এআইএস) গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার
Text size A A A
Color C C C C

পুষ্টিমানের বিবেচনায় বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত পাটশাক

পুষ্টিমানের বিবেচনায় বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত পাটশাক
ড. এ টি এম মোরশেদ আলম

মানুষের শরীরকে সুস্থ, সুন্দর-আকর্ষণীয়, পরিপুষ্ট ও কর্মক্ষম রাখার জন্য প্রয়োজন খাদ্যপুষ্টি। যে সব খাদ্য গ্রহণ করলে দেহে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন হয়, দেহের বৃদ্ধি সাধন ও ক্ষয়পূরণ হয় এবং দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ে সেগুলোকে সুষম খাদ্য বলে। কাজেই আমাদের পুষ্টি চাহিদার বিবেচনায় প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই সঠিক পরিমাণে শক্তিদায়ক, শরীরবৃদ্ধিকারক ও ক্ষয়পূরক এবং রোগ প্রতিরোধকারী খাদ্যদ্রব্য অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। শক্তিদায়ক খাদ্য হিসেবে আমরা সাধারণত কার্বহাইড্রেট বা ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার খেয়ে থাকি। যেমন : ভাত, রুটি, আলু, ঘি, তেল, মাখন, মিষ্টি ইত্যাদি। শরীর বৃদ্ধিকারক ও ক্ষয়পূরক খাবার হিসাবে আমরা মাছ, মাংস, ডিম, ডাল, দুধ, শীমের বিচি, বাদাম ইত্যাদি খেয়ে থাকি। আর রোগ প্রতিরোধকারী খাবার হিসেবে আমরা বিভিন্ন প্রকার শাকসবজি ও ফলমূল খেয়ে থাকি। এসব খাবার আমাদের দেহে ভিটামিন ও খনিজ লবণ সরবরাহ করে থাকে। এই ভিটামিন ও খনিজ লবণ বিভিন্ন ধরনের রোগের বিরুদ্ধে আমাদের শরীরে প্রতিরোধ ক্ষমতা গড়ে তোলে এবং দেহকে রোগমুক্ত রাখতে সাহায্য করে।


বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত পাটশাক ও সবজি মেস্তা : পুষ্টি বিজ্ঞানীদের মতে একজন প্রাপ্ত বয়স্ক মানুষের দৈনিক কমপক্ষে প্রায় ৩০০ গ্রাম শাকসবজি খাওয়া প্রয়োজন। কারণ, শাকসবজিতে মানবদেহের জন্য অত্যাবশ্যকীয় ভিটামিন, খনিজ লবণ ও আঁশ রয়েছে। এসব শাকসবজি কেবল শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় না, বরং ভক্ষণকৃত খাদ্যকে হজম, পরিপাক ও বিপাকে সহায়তা করে এবং খাবারে রুচি বৃদ্ধি ও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে  গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। শাকসবজির এসব গুণাগুণ বিবেচনা করে দেশের প্রাচীনতম গবেষণা প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট শাক হিসেবে ব্যবহারের জন্য পাটের তিনটি জাত উদ্ভাবন করেছে।


২০১৪ সালে বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ এবং ২০২০ সালে বিজেআরআই দেশি পাট শাক-২ ও বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ উদ্ভাবন করেছেন। এ ছাড়া বিজেআরআই-এর বিজ্ঞানীগণ গবেষণার মাধ্যমে ২০১০ সালে খাওয়ার উপযোগী বিজেআরআই মেস্তা-২ বা সবজি মেস্তা-১ উদ্ভাবন করেছেন।


বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ : বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ (বিজেসি-৩৯০), প্রজনন বিভাগ, বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিজেআরআই) কর্তৃক উদ্ভাবিত দেশি পাটশাকের একটি উন্নত জাত। এটি অগ্রবর্তী লাইন ঈধঢ়. ফধিৎভ ৎবফ- এর সাথে বিনা পাটশাক-১ এর সংস্করায়ণের মাধ্যমে বেশি পাতা বিশিষ্ট ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত এই জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে জাতটি সমগ্র বাংলাদেশে বপন উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ ছাড়া জাতটিতে আমিষ, আঁশ, ভিটামিন-সি, অ্যাশ, কার্বহাইড্রেট এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন (ভিটামিন-এ) বিদ্যমান। খাদ্য ও পুষ্টিমানের সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০১৪ সালে এ জাতটিকে পাটশাক হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশে চাষবাদের জন্য বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ নামে নিবন্ধন করা হয়েছে।


এ জাতের গাছ সম্পূর্ণ সবুজ এবং পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের। এ জাতটি থেকে কোন প্রকার আঁশ পাওয়া যায় না। কারণ গাছটি খুবই খাট। দেশি জাত হওয়া সত্ত্বেও এ জাতের পাতা মিষ্টি স্বাদযুক্ত হওয়ায় বাজারে এর চাহিদা অন্যান্য জাতের চেয়ে বেশি। এ জাতের পাট গাছের বয়স ৩৫-৪০ দিন হলে তখন থেকেই শাক খাওয়া যায়। প্রথমে ছোট চারা গাছ তুলে এবং পরবর্তীতে গাছের ডগা ছিঁড়ে শাক খাওয়া যায়। ডগা খাওয়ার কিছুদিন পর শাখা-প্রশাখা থেকে কচি পাতা বের হলে সেগুলোও শাক হিসেবে খাওয়া যায়। এভাবে বেশ কয়েকবার শাক সংগ্রহ করা যায়। বিজেআরআই পাটশাক-১ একবার চাষ করে দীর্ঘ কয়েক মাস পর্যন্ত শাক সংগ্রহ করা যায়। বাড়ির ছাদে/বারান্দায় কয়েকটি টবে পাটশাক চাষ করে ছোট পরিবারের শাকের চাহিদা সহজেই পূরণ করা যায়। বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ এর পাতার ফলন প্রায় ৩.০-৩.৫০ টন/হেক্টর।


বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ : বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ ম্যাড়াশাক (লাল) নামে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে পরিচিত। এটিকে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের কৃষকের নিকট থেকে সংগ্রহ করে নির্বাচন পদ্ধতিতে অভিযোজন-এর মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়েছে। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে জাতটি সমগ্র বাংলাদেশে বছরব্যাপী চাষ উপযোগী বলে প্রমাণিত হয়েছে। এ জাতের পাটশাকে আমিষ, ভিটামিন-সি, আঁশ এবং প্রচুর পরিমাণে ক্যারোটিন (ভিটামিন-এ) পাওয়া যায়। খাদ্য ও পুষ্টিমানের বিবেচনায় জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০২০ সালে এ জাতটিকে পাটশাক হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য বিজেআরআই দেশি পাটশাক-২ নামে নিবন্ধন করা হয়েছে। এ জাতের পাটগাছ বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ এর তুলনায় আকারে ছোট। গাছের কাণ্ড, পাতার বৃন্ত ও শিরা গাঢ় লাল। পাতা গাঢ় সবুজ বর্ণের ও মিষ্টি স্বাদযুক্ত। এ জাতটি মধ্য ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের শেষ (ফাল্গুন মাস থেকে মধ্য কার্তিক) পর্যন্ত বপন করা যায়। তবে মার্চ থেকে জুলাই এর শেষ (মধ্য ফাল্গুন থেকে মধ্য শ্রাবণ) পর্যন্ত সময়ে বপন করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। বিজেআরআই দেশি পাট শাক-২ এর পাতার ফলন প্রায় ৩.০০-৩.৫০ টন/হেক্টর।


বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ : বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ ম্যাড়াশাক (সবুজ) নামে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলে সুপরিচিত। পাটের এ শাকটিকে বৃহত্তর রংপুর অঞ্চলের কৃষকের নিকট থেকে সংগ্রহ করে নির্বাচন পদ্ধতিতে অভিযোজন-এর মাধ্যমে এ জাতটি উদ্ভাবন করা হয়। বিভিন্ন পরীক্ষার মাধ্যমে জাতটি সমগ্র বাংলাদেশে বছরব্যাপী চাষ উপযোগী বলে প্রমানিত হয়েছে। ম্যাড়াশাক (সবুজ)-এ আমিষ, ভিটামিন-সি, আঁশ, প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-এ (ক্যারোটিন) এবং অ্যাশ আছে। খাদ্য ও পুষ্টিমান বিবেচনায় নিয়ে এ লাইনটিকে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক ২০২০ সালে পাটশাক হিসেবে সমগ্র বাংলাদেশে চাষাবাদের জন্য বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ নামে নিবন্ধন করা হয়েছে।


বিজেআরআই দেশি পাটশাক-৩ আকার বিজেআরআই দেশি পাটশাক-১ এর তুলনায় ছোট। গাছের কাণ্ড, পাতার বৃত্ত ও শিরা গাঢ় সবুজ। পাতা মিষ্টি স্বাদযুক্ত ও গাঢ় সবুজ বর্ণের।
এ জাতটি ফেব্রুয়ারি থেকে অক্টোবর মাসের শেষ পর্যন্ত বপন করা যায়। তবে মার্চ থেকে সেপ্টেম্বরের শেষ পর্যন্ত সময়ে বীজ বপন করলে অধিক ফলন পাওয়া যায়। পাট গাছের বয়স             ৩০-৩৫ দিন হলে শাক সংগ্রহ করা শুরু হয়। তবে এ জাতে দ্রুত ফুল এসে যায় বলে এক বা দুই ধাপেই শাক সংগ্রহ করতে হয়। ম্যাড়াশাক (সবুজ) এর ফলন ৩.০-৪.০ টন/হেক্টর। তবে বীজ বপনের সময় ভেদে ফলনের তারতম্য হতে পারে।    


বিজেআরআই মেস্তা-২ বা সবজি মেস্তা-১ : বিজেআরআই মেস্তা-২ বা সবজি মেস্তা-১ স্থানীয়ভাবে চুকুর নামে পরিচিত। এ জাতটি বিশুদ্ধ সারি নির্বাচন পদ্ধতিতে উদ্ভাবন করা হয়েছে যা ২০১০ সালে জাতীয় বীজ বোর্ড কর্তৃক জাত হিসেবে অবমুক্ত করা হয়। সবজি মেস্তার-১ এর কাণ্ড তামাটে বর্ণের এবং শাখা-প্রশাখা বিশিষ্ট। পাতা আঙ্গুল আকৃতির (খণ্ডিত), হালকা সবুজ, মসৃন এবং স্বাদে টক।
বৈশাখের প্রথম থেকে শ্রাবণের শেষ সময় (১৫ এপ্রিল থেকে ৩০ জুন) পযন্ত সবজি মেস্তার বীজ বপন করা যায়। বীজ বপনের ৬০ দিন পর থেকে পাতা এবং ফল আসার পর থেকে বৃতি সংগ্রহ করা যায়। বৃতির ফলন ২.০০-২.৫০ টন/হেক্টর বা ৭.৫০-৯.০০ মন/বিঘা। পাতার ফলন ৬.০০-৭.০০ টন/হেক্টর বা ২২.০০-২৬.০০ মন/বিঘা।


বিজেআরআই-৪ : বিজেআরআই কর্তৃক উদ্ভাবিত সবজি মেস্তা-১ খরা সহনশীল ও নেমাটোড প্রতিরোধী এ জাতটি উঁচু, মাঝারি উঁচু জমিতে এবং বাড়ির আঙ্গিনায় চাষ করা যায়। ফল থেকে বৃতি সংগ্রহ করে খাওয়া যায় এবং এর বীজ থেকে ২০% ভোজ্যতেল পাওয়া যায়। সবজি মেস্তার পাতা ও ফলের মাংসল বৃতি (শাঁস) টক এবং সুস্বাদু। তাই, রান্না করে তরকারি হিসেবে খাওয়া যায়। তাছাড়া এর মাংসল বৃতি থেকে কনফেকশনারি খাদ্য সামগ্রী যেমন- জ্যাম, জেলি, জুস, আচার, চা সদৃশ পানীয় ইত্যাদি তৈরিতে ব্যবহৃত হয়। মেস্তার ক্যালিক্স বা বৃতি দিয়ে তৈরি চা সদৃশ পানীয় নিয়মিত পান করলে ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। এ ছাড়াও এ পানীয় হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় ও শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে। প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি সমৃদ্ধ এ পানীয় মেয়েদের মাসিক পিরিয়ডের ব্যথা প্রশমন করে। গবেষণায় দেখা গেছে মেস্তার ক্যালিক্স দিয়ে তৈরি এ পানীয় অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট সমৃদ্ধ যা ক্যান্সার প্রতিরোধ করতে সক্ষম।


পাট ও পাটজাতীয় আঁশ ফসলের আবাদি চারটি প্রজাতির প্রায় ২০-২৫টি জাত বাংলাদেশের বিভিন্ন এলাকায় চাষাবাদ হয়ে থাকে। তবে বিশ্বের সবচেয়ে উন্নত মানের দেশি ও তোষা পাট একমাত্র বাংলাদেশেই উৎপন্ন হয়। মানুষ বহুদিন যাবৎ পাটপাতা শাক হিসেবে খেয়ে আসছে। পাটশাক বহু পুষ্টিগুণ ও বিভিন্ন ঔষধিগুণে ভরপুর। এমতাবস্থায় পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ ও শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় পাটের শাক অত্যাবশ্যকীয় করা একান্ত প্রয়োজন।

লেখক : মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা পরিকল্পনা, প্রশিক্ষণ ও যোগাযোগ বিভাগ, বিজেআরআই, ঢাকা-১২০৭। মোবাইল :০১৭৪০৫৫৯১৫৫, ই-মেইল :  morshedbjri@gmail.com

 


COVID19 Movement Pass Online Police Clearance BD Police Help line Expatriate Cell Opinion or Complaint NIS Bangladesh Police Hot Line Number Right to Information PIMS Police Cyber Support for Women BPWN Annual Training Workshop Achievement & Success PHQ Invitation Card
Press Release Recruitment Information Procurement / Tender Notice Legal Instrument Innovation Corner Detective Magazine Bangladesh Football Club Diabetes-Covid19 Exam Results Accident Info Important Forms

Apps

icon icon icon icon icon icon